কুরআন ও হাদিসের আলোকে মধুর গুনাগুন

আসসালামু আলাইকুম। আজ আমি আজকের এই পোস্টে মধুর গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করবো। আমাদের শরীরে মধুর উপকারিতা এতটাই, যে সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে।

Honey

আল-কুরআনে সূরা (আন নহল) এ আল্লাহ তায়া’লা মধুর সম্পর্কে বলেছেন। আসুন জেনে নেই কুরআনে কি বলা হয়েছে __সূরা আন নহলের ৬৮ এবং ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ


# "তোমার প্রভু মৌমাছির কাছে অহি করেছেনঃ তোমরা মৌচাক নির্মাণ করো পাহাড়ে -পর্বতে, গাছ -গাছালিতে এবং মানুষের নির্মিত উঁচু জায়গাতে। তারপর প্রত্যেক ফল (ফুল) থেকে কিছু কিছু খাও এবং তোমার প্রভুর প্রদর্শিত সহজ পথ অনুসরন করো।" এভাবে তার পেট থেকে বের হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয় (মধু), যাতে মানুষের জন্যে রয়েছে নিরাময়। অবশ্যি চিন্তাশীল লোকদের জন্যে এতে রয়েছে একটি নিদর্শন। 

#.প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ  (সাঃ) বলেন, ‘মধুতে আরোগ্য নিহিত আছে।’  (সহীহ বুখারি: ৫২৪৮)।

#.আয়েশা (রা.) বলেছেন,প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ  (সাঃ) এর কাছে মধু ও মিষ্টান্ন খুব প্রিয় ছিল।  (সহীহ বুখারি: ৫২৫০)।

#.প্রিয়নবী রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে খাবে, তার বড় ধরনের কোনো রোগ হবে না।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৪৪১)।

মধুর  গুনাগুনঃ__

১. রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়:

মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও যোগান দেয়। মধুতে আছে এক ধরনের  শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা থাকে।

২. হৃদরোগে:
হৃদরোগ নিরাময়ে মধু বেশ উপকারি।
এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সাথে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃদপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি থাকে।

৩.ওজন কমাতে মধুঃ  মধু
ওজন কমাতে বা চর্বি কমাতে মধু খুবি উপকারি মধুতে নেই কোনো চর্বি। পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, ফলে ওজন কমে।
মধু খেলে পাকস্থলী থেকে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয় যার জন্য মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বেড়ে যায় এবং মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মেদ কমার সুযোগ তৈরি হয়।

৪. অনিদ্রায়ঃ

মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু বা শুধু মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম এবং সম্মোহনের কাজ করে।


৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর রেঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে  মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া,  কোষ্ঠকাঠিন্য,বিভিন্ন রোগ  দূর করে। ১ চা–চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।


৬. পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ

মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমে সাহায্য করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়। পাকস্থলী সুস্থতায় মধু  নিয়মিত খেলে এইস সমস্যা দূর হয়।


৭.যৌন দুর্বলতা কাটাতে মধুঃ পুরুষদের মধ্যে যাঁদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তাঁরা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান, তাহলে বেশ উপকার পাবেন। মধু নিয়মিত খেলে পুরুষাঙ্গ শক্তিশালী হয়


৮.গলাভাঙ্গা দ্রুত সারায় :-

যাকে আমরা গলাভাঙ্গা বলি সেটা আসলে স্বরভঙ্গ । বেশি ঠাণ্ডা লাগলে কন্ঠ নালীর স্বরতন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত বা আক্রান্ত হলেই এরকমটা হয়ে থাকে। তাই এরকম হলে সৈন্ধব লবণ বা Rock salt এর সঙ্গে আমলকি,পিপুল, গোল মরিচ ইত্যাদির সঙ্গে মধু মিশিয়ে এক চা চামচ করে খেলে কফ যেমন দূর হবে তেমনি ও স্বরভাঙ্গাও দ্রুত কমে যাবে এবং কণ্ঠনালী ভালো থাকবে।


৯.রক্ত পরিষ্কার রাখে :-

লেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে রক্ত পরিষ্কার থাকে। এটা অভ্যাস করতে পারলে শরীরের অনেকগুলি দিকে উপকার পাওয়া যাবে।


১০.দাঁতের গোড়া শক্ত করে :-

দাঁতকে ও দাঁতের গোড়া মজবুত করতে হলে নিয়মিত মধু সেবন করা দরকার। বিভিন্ন জীবানু মধুর সংস্পর্শে ধ্বংস হয়ে যায়। তার ফলে আপনার দাঁত থাকবে মজবুত এবং ভালো।


১১.ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধি করে :-

ত্বকের যত্নে মধুর উপকারিতা অনেক।
মধু যেহেতু উত্তম একটি ভেষজ , আর এর মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের টান টান অবস্থা ধরে রাখার পাশাপাশি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে।  ত্বক থাকে মসৃণ ও কোমল। তাই মধু বুড়িয়ে যাওয়া থেকে দূরে রাখে। বর্তমানে তাই রূপচর্চায় মধুর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।


১২.হাঁপানি রোধে: 

আপনি যদি পারেন আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। আপনি দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রিত পানি খান। এটা হাঁপানি রোধে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।


#.উপসংহারঃ মধু আমাদের জন্য আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় একটি নেয়ামত। যে নেয়ামতের কথা আল্লাহ এবং নবী রাসূল কুরআন ও হাদিসে আলোচনা করেছেন।

আমরা সকলেই এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি "আলহামদুলিল্লাহ "

Previous Post Next Post